দশ

বলতে বলতে এসে যাচ্ছে ২০১৯৷ মাসগুলো, কী করে যেন কেটে যাচ্ছে, বুঝতে পারি না৷ এই তো ২০১৮-এর অনুষ্ঠানে শেষ করলাম৷ তারপর আবার আবার ব্যস্ততা চলছিল৷ নানা অনুষ্ঠানে আমার আমন্ত্রণ চলে আসে, পুরস্কার বা সংবর্ধনা৷ না, এসব নিয়ে যেমন আমার ভাবনা নেই---তেমনি কেউ যদি আমাকে ভালোবাসা দিতে চায় সেটাতো আমি ফিরিয়ে দিতে পারি না৷ যে আমার ভাবনাতে মুগ্ধ সে আমাকে কিছু ভালোবাসা দিতে চায়, তার মতো করে৷ সেটা সংবর্ধনা বা পুরষ্কার বা পদক যাই হোক৷
এই ভাবে তো চলে আসছি, ২০১৬ থেকে, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে---কত ভাবনা, আঘাত, সুখ আর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে ক’টা বছর কেটে গেল, কীভাবে যেন!
লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছি! আরো করতে হবে৷ লড়ে যাচ্ছি একা৷ মূল অনুষ্ঠানের পর প্রতি বছর খন্ড খন্ড অনুষ্ঠান করতে হয় নানা স্থানে, মাঠ, প্রেস ক্লাব, নানা হল-এ৷ কারণ এই চিন্তাটাকে এইভাবে প্রতিনিয়ত জাগিয়ে না রাখলে এর চলমানতা নষ্ট হবে৷
কেউ বলে, মাইকেল, একটা বড় ব্যবসা কর, এই টাকা নিয়ে এই কাজ করছো কেন?
কিন্তু এই কাজগুলি কি এদের নিয়মে হয়!
যে কোনো বড় কাজের ক্ষেত্রে কিন্তু সফল করার বিষয় ও পথটা আলাদা!

কী একটা গতির ভিতর যেন ঢুকে পড়েছি! বুঝেছি, আমার মানব জন্ম ধন্য আমি এই কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।
এই ভাবেই চলতে থাকলাম৷

এদিকে একটা কথা এখানে বলা দরকার৷ এখন, ২০১৮ এর মধ্যবর্তী সময়৷
আমার নানা অনুষ্ঠানে যাওয়া বেড়ে গেছে৷ আমাকে আরো বেশি করে মানুষ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ কারণ তারা ভেবেছে যে এটা এমন কিছু বিষয় যা নতুন কিছু ভাবতে পারে৷ সমাজ জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে৷
এদিকে দেখা হয় নানা সভায় ঋদেনদিক মিত্রো বলে একজনকে, যে ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় কবি-ঔপন্যাসিক-গীতিকার, পেশায় লেখক৷ দুটি ভাষায় আলাদা ভাবেই লেখেন তিনি, অনুবাদ নয়৷
উনি আমাকে গুরুত্ব দিতেন না প্রথমে, মুখে কিছু বলতেন না আমাকে৷ পরিচয় করারও দরকার বোধ করতেন না৷ প্রথম দেখা ওঁর সাথে সাংবাদিক বিধান ঘোষের ‘প্রশান্ত ঘোষ স্মৃতি মেমোরিয়াল ফাইন্ডেশন’ এর অনুষ্ঠানে, তাঁতিগাছি, শিমুরালী, নদীয়াতে৷ বিধানদা প্রেসক্লাব কলকাতা সহ নানা জেলায় নানা স্থানে বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, গবেষক, অধ্যাপক, কবি, লেখক, গায়ক, গায়িকা, অভিনেতা-সহ নানা গুণীজনদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেন৷ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান৷
উনি নিজে একটি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক৷ অন্যান্য নানা সংগঠনের সাথেও উনি জড়িয়ে থাকায় সেই সব অনুষ্ঠানেও আমি আর ঋদেনদিক আমন্ত্রণ পাই৷ আর ঘটনাক্রমে দেখা হয়৷ কিন্তু কথা হয় না৷
কারণ যে যার কাজ করে চলে যাই৷
এদিকে ওঁর অনুষ্ঠান শুনে ও দেখতে-দেখতে বুঝলাম নিজের মত কিছু একদিন ওঁনাকে প্রস্তাব দিলাম, ‘ইংরেজিতে ওয়ার্ল্ড অ্যান্থেম লিখবে!’
এরপর ওঁকে কলকাতার বাড়িতে ডাকলাম৷ উনি আসবেন-আসবেন বলে দিন ১৫ পর এলেন৷ উনি সাথে করে এনেছিলেন ইংরেজিতে কিছু পপ সংগীত, আমার কাছে আসবেন বলে আগে থেকেই লিখে তৈরি হয়ে ছিলেন, কিন্তু, আমি ঐগুলি দেখে বললাম, ‘এর একটা নিচ্ছি, যে-হেতু পৃথিবীমাতা নিয়ে লেখা, কিন্তু আমি চাই অ্যান্থেম, আপনি বসুন, তারপর বলছি, আমি কী চাই৷ আগে থেকেই বলে রাখি, আমার বিষয়টা আপনার লেখাতে ঠিক অ্যান্থেমের মত করে না-থাকলে আমি নিতে পারব না৷ আর, আমি কী চাই, সেটা বুঝিয়ে বলব, আপনি আপনার দক্ষতায় কীভাবে সেগুলি সঠিক রস দিয়ে প্রতিস্থাপিত বা প্রতিফলিত করবেন সেটা আপনার দক্ষতার ব্যাপার৷’
ওঁকে আমি ব্যাপারটা বোঝালাম৷ উনি বুঝলেন৷ সাথে সাথে লিখলেন আমার সামনেই ওয়ার্ল্ড অ্যান্থেম--- ‘উই আর দ্য সিটিজেন অব দি আর্থ৷’ চার পাঁচ লাইন করে লিখছেন আর আমাকে বলছেন, ‘হচ্ছে কি!’ ‘আমি বললাম, ‘হচ্ছে, আমি যা চাই সেটা আপনি বুঝতে পেরেছেন বলে আমার বিশ্বাস৷’
যদিও, অবাক হইনি, ওঁনার এই কাজে, বরং না পারলে অবাক হতাম, কারণ উনি এমনটা পারেন, আমি শুনেছি ও জেনেছি, এমন কী দেখেছি নানা অনুষ্ঠানে এই দক্ষতা৷ দর্শকাসনে বসে বাংলা, কখনো ইংরেজিতে কবিতা লিখে মঞ্চে এসে পড়েছেন, আর মানুষ হাততালি দিচ্ছে৷ অনেকে ইংরেজি অল্প বোঝেন বলে উনি সাথে সাথে খুব আকর্ষণ নিয়ে অনুবাদ করে দিচ্ছেন৷ ওঁনার নেকটাই পরা পাশ্চাত্য পোষাকের সাথে চালচলন কথাবার্তাগুলিতে বিদেশের ছবিটা মনে এসে যেত আমার৷ যিনি ইংরেজি লেখেন, তার সব কিছু এমনটা হলে, বিশেষত, এই টিভি, কম্পিউটার, এ্যনড্রয়েড, ইনটারনেটের যুগে এমনটা হলে, তাঁকে দিয়ে এই ধরনের আন্তর্জাতিক কাজ করানো যায়, বুকে আশা নিয়েই৷
এর মানে এই নয় যে, কেউ এদেশীয় পোশাক পরলে তিনি আন্তর্জাতিক হতে পারেন না বা ওঁনার মতো যাঁরা পোশাক পরেন, কথা বলেন, তাঁরা সব আন্তর্জাতিক৷
আসলে আমি এই বিষয়টা এই ভাবে ব্যাখ্যা করছি না, কিন্তু ওঁনার বিশেষ কিছু বিষয় সকলকে যেমন মুগ্দ করত, আমাকেও তেমনি৷ আলাদা ভাবে আশা জাগে ওঁকে দেখে৷
যাইহোক, আমার ভাবনাকে নিয়ে উনি ওনার মতো যখন বিশ্ব সংগীতটা লিখলেন, আমি উৎফুল্লিত হলাম৷ কিন্তু ওটাকে আরো মাজা-ঘসা করতে বললাম৷ উনি আমার ল্যাপটপেই সমস্ত কাজ করলেন কারণ ঐ সময় ওনার নেট ছিল না, যাইহোক আমারও এম. এস. ওয়ার্ড ছিল না, দরকার ছিল না বলে ওটা ইনস্টল করিনি, যেহেতু ইমেল মারফৎ আমার কাজ চলত৷ যাইহোক আমার ই-মেলে টাইপ করে ওনার ই-মেলে এ পাঠিয়ে দিলেন৷ আসলে, একটা কাজের পেছনে কত কী ঘুরপাক থাকে, টুকটাক শেয়ার করছি, পরিস্থিতির ভিতর সকলের কল্পনাকে নিয়ে যাবার জন্য৷ যাতে সকলেই ব্যাপারটাকে ধারাবাহিকভাবে উপভোগ করতে পারেন গভীর ভাবে৷
বাড়ি ফিরে একদিন সাইবার কাফেতে গিয়ে, কাটা ছেঁড়া করলেন৷ তারপর অনেক কাহিনি, ঘুরে ঘুরে ঘটনাক্রমে পেলাম সুরকার৷ যা এর উপযুক্ত৷ পেলাম পূজা মজুমদার ও দেব সায়েলকে৷ ওদের পেশা গান করা ৷ কিন্তু হাতে সময় নেই, সামনে প্রেসমিট, ৯ই জুলাই ২০১৮ তে, প্রেস ক্লাব কোলকাতাতে৷
সিঙ্গাররা রাজি হল না এত অল্প সময়ে৷ কিন্তু অনেকে যেমন ইংরেজি গান ও নতুন গান বলে পিছিয়ে গিয়েছিল, এরা সেটা না করে প্রস্তাব দিল যে, কোনো ভাবে গানটাকে মঞ্চস্থ করবে৷ কিন্তু ভালো করতে হলে সময় দিতে হবে৷
আমাদের হাতে সময় নেই৷
সুর করলেন পূজার সংগীত শিক্ষক, একজন নামী গায়ক ও সুরকার, কুমার চঞ্চল৷ এই নামেই উনি পরিচিত মানুষের মাঝে৷
তাড়াতাড়ি সুর হল৷ দিন দুয়েকের ভিতর কী আর হয়, এত বড় কাজ, বিশ্ব জয় করার কাজ!
আর নানা ঝামেলার ভিতর সামান্য রিহার্সালে যেটুকু হল তাই নিয়ে ওঁরা ঐ দিন প্রেস ক্লাবে এসে গাইলেন৷
পূজা ও দেব লিড, গানের লেখক ঋদেনদিক কোরাসে৷ সবাই দাঁড়িয়ে শুনলেন--- ‘উই আর দ্য সিটিজেন অব দি আর্থ৷’ দৃশ্যটার কথা আমার সারাজীবন মনে থাকবে ইংরেজিভাষী যে দেশ নয় এবং সর্বোপরি যে দেশ ইউরোপ থেকে বহু বহু দূরে, সেখানে ইংরেজিতে বিশ্ব সংগীত জন্ম নিচ্ছে বিশ্বকে মুগ্ধ করার জন্য৷ এদিকে বিশ্ব সংগীত বলে সকলেই উঠে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে শুনলেন৷ দেখলাম তাঁদের চোখ ছলছল করছে৷ সবাই সায় দিল ভালো৷ আর এটাতে আরো ঘসে মেজে করলে দুরন্ত হবে৷ বিশ্ব জয়ের মতো জিনিস আমি মনের জোর পেলাম৷ সবার কাছেই জানিয়ে দিলাম সময়ের অভাবে এর চেয়ে ভালো করা যায় নি কিন্তু এই সংগীতে এমন কিছু  প্রকাশ পেলো, যে-জন্য সকলেই এর উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিয়ে আশা প্রকাশ করলেন৷
সমাজে কিছু মানুষ অন্যরকম থাকেন, তাঁরা কী বলেছিলেন সেটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই নি, আমি যা বোঝার বুঝে নিলাম চারিদিকে তাকিয়ে সামগ্রিক ভাবে৷
তারপর ওই অনুষ্ঠানে ফারনানদো রডরিক ওরফে অভিজিতের তৈরি বিশ্বমাতার মূর্তির মডেল দেখান হল৷ আর ওটা যাতে নাটশালে প্রতিষ্ঠা করা হয় সরকার থেকে, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে সেই প্রস্তাব দিয়ে ৯ই জুলাইয়ের অনুষ্ঠানটাকে উৎসর্গ করলাম৷
এরপর বেড়ে যেতে থাকল আমার কাজের আলোচনা আরো আরো বেশি করে৷ মানুষের ভিতর৷
এদিকে পূজা ও দেব নানা প্রতিযোগিতা ও প্রোগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য ওরা ওয়ার্ল্ড অ্যান্থেমের জন্য আলাদা ভাবে রিহার্সাল দিতে না পারায়, খোঁজা চলল অন্য কাউকে৷ এদিকে মিউজিক ডিরেক্টর কুমার চঞ্চল আরো গবেষণা করলেন সংগীতটি নিয়ে, নানা সময়৷ তারপর বেশ কয়েক জনকে দিয়ে রেকডিং করালেন৷ সকলেই ভালো গাইলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৌ আচার্য, ভালো নাম অনুশ্রী আচার্য, বেঙ্গল মিউজিক কলেজের ছাত্রী, তার গলা আর অঙ্গভঙ্গী সবচেয়ে বেশি মানাসই হোলো৷
আর ওর রেকর্ডিং হোলো ১৮-ই ডিসেম্বর ২০১৮৷
মৌ কঠোর চর্চা করে দুরন্ত গাইল৷ আর অপেক্ষাতে থাকলাম, কবে এই গানটি চারপাশে ছড়িয়ে যাবে, সারা বিশ্বে৷
এদিকে, হাই-নিউজ, এই নামের একটি টিভি চ্যানেলে আমার এই বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চাইল৷ ২৯শে ডিসেম্বর ২০১৮ হোলো লাইভ৷ গানটি সারা পৃথিবীতে ছড়াল৷ মৌ গাইল গানটা৷ চমকে গেল মানুষ৷ তাও ওটাতো রেকর্ডিং ছিল না৷ কিন্তু তাতেই মানুষ চমকিত৷ ভারতবর্ষ, তাও আবার পশ্চিমবঙ্গ, সেখান থেকে বিশ্ব সংগীত লিখে, সুর হয়ে রেকর্ডিং হয়ে সারা বিশ্বের জন্য বাজারে ছাড়া হচ্ছে, আর সেটা যাবে রাষ্ট্রসংঘে, ইংরেজি-ভাষী দেশগুলি শুনবে, গ্রহণ করবে, কী কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার, সেটা সকলেই বুঝতে পারছেন৷ আসলে আমি আস্থা রেখেছি, সেই একজনের ওপর৷ বিশ্বজননী।